ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের কোনো ইঙ্গিত দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শনিবার তিন রাষ্ট্রনেতা প্রায় ৭৫ মিনিট ধরে টেলিফোনে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করলেও পুতিন নমনীয়তা দেখাননি বলে ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এলিসি প্রাসাদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
টেলিফোনে আলাপকালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান। এলিসি প্রাসাদের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ অবসানে প্রস্তুত নন বলে মনে হয়েছে।’
ইউক্রেনীয় সৈন্যরা দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মন্তব্য করায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছে।
গত কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে খাদ্য, পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। রুশ হামলার কারণে শহরের হাজার হাজার মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এই শহর থেকে অবরোধ তুলে নিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট তার এই আহ্বানের ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেননি।
এদিকে, ইউক্রেনে পশ্চিমের সরবরাহকৃত সামরিক অস্ত্র-সরঞ্জামের বহর রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াকভ।
‘আমরা ইউক্রেনে পরিবহনযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো নানা ধরনের অস্ত্রের এই বেপরোয়া হস্তান্তরের ফলে যে পরিণতি হতে পারে, সে সম্পর্কে সতর্ক করেছি।’ রাশিয়ার এই সতর্কবার্তা যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সাথে নেয়নি বলে দাবি করেছেন সের্গেই রিয়াকভ।
যুদ্ধের ১৭ দিনে ১৩০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত: জেলেনস্কি
রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের প্রথম ১৭ দিনে ইউক্রেনের অন্তত এক হাজার ৩০০ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রাণহানির এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তবে রাশিয়ার সৈন্য হতাহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।
জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন। জেলেনস্কির এই তথ্য নিরপক্ষেভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলেছে, পশ্চিমা সূত্রগুলোর ধারণা— একই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ৬ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে, শনিবার রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের ছোট ছোট শহরগুলোতে রুশ সৈন্যদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার ভারী গোলাবর্ষণ, বিমান হামলার হুমকি এবং শহর ঘিরে ফেলার কারণে কিয়েভ ছাড়তে মরিয়া বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ান ট্যাক্টিক্যাল গ্রুপের ৩১টি ব্যাটালিয়নকে নিস্ক্রিয় করায় রাশিয়া নতুন করে সৈন্য পাঠাচ্ছে। ব্যাটালিয়ন নিস্ক্রিয় করার এই ঘটনাকে কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন তিনি। ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শুধুমাত্র শুক্রবারই রাশিয়ার ৫০০-৬০০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।
শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। টেলিফোনে আলাপকালে ইউক্রেনের মেলিতপোল শহরের মেয়রকে রুশ সৈন্যরা অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং মেয়রকে মুক্তি দিতে রাশিয়ার প্রতি চাপপ্রয়োগে ম্যাক্রোঁ ও শোলৎজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আরটি।
Leave a Reply